Monday, September 7, 2009

ফেরারি পর্ব ২

তুমি সুন্দর; তুমি আত্নরহিত— জানি না খণ্ডে খণ্ডে তুমি রাতের উষ্ণতা খুঁজে ফিরো কেনো? কেন রাত্রি খুঁড়ে তুলো দগ্ধ জ্বালা, পত্র-পাত্রে অর্ধেক জলের  তৃষ্ণায়... তৃষ্ণায় ঝুলে পড়ো তপ্তবাহুতে রক্ত-মাংশের ঘ্রাণে ঝরে পড়ছে জল তার অর্থ জানি না বলে কে যেন দিয়ে গেল দ্বিধা


কারো অজুহাতে নয়; এখন নিজেই করাত কলের পাশে মাছ-মাংশ টুকরো টুকরো করি মুঠোভর্তি দীর্ঘশ্বাস ঝেড়ে; দুঃখ যত একাকী পুড়ে করাত কলের পাশে— তুমি সে দৃশ্য দেখার আগে, আগেই হয়েছো নিরাকার; রাত্রি ভুলে হয়েছো  সত্তাহীন; তাই মোমের আদলে গলে যাও তুমি;গলে যায় যন্ত্রণা যত... কষ্টকে জমতে দেই না কখনো, হাড়গোড়ের মাঝে সবটুকু কেটে ফেলি করাত কলের পাশে


আমার দু'হাতে বরফের জল; আঙুলে লেগে আছে খরা তার অর্থ কেউ বুঝবে না অর্ধেক লেগে আছে প্রাণে, করাত কলেই সব জানে... যারা করাত কলে  দৃষ্টি ফেলে রাখে তাদের জন্য মায়া হয় কম; তারাও কি? অজান্তে সব কষ্ট ছুঁড়ে দিতে চায় করাত কলে



তুমি রাত্রি নৃত্যময়ী; তুমি রাত্রিতাড়িত ভ্রান্ত পথিক; লাফে-ঝাঁপে নুয়ে পড়ে স্বপ্ন, রাত্রিডানায় রাত্রিকে টেনে হিঁচড়ে করেছো নিষ্পাপ রাবারের মতো আয়ূ নিয়ে জেগেছো দূরে; অন্ধকারে জানি সুখে-দুঃখে আমৃত্যু সংলিপ্ত ছিলে আয়নার পাশে


কার আঙুল ছুঁতে লেগেছিল দ্বিধা; কাকে ছুঁয়ে দেখার আগে ঝরেছিল জল; পায়ের পাতা তোমার স্তব্ধতা নিয়ে জেগে ওঠে স্পর্শ; শিউরে উঠি আমিসহ শিরা-উপশিরা তোমার আকাঙ্খা অপূর্ণ রাখিনি বিনিময়ে কিছুই চাওনি তাই রতিভ্রমে খুলে পড়েছিল লাজ রাতের উদাসীন হাড়লিপি... দেহের উষ্ণতা


জীবনের দায়ভার রেখে খামচে ধরো আয়ূ; পাজামার ফিতা হয়ত নিয়ম ভাঙতে যাওনি তাই চুম্বনের জন্যই... শুধু চুম্বনের জন্যই এত দীর্ঘশ্বাস... দীর্ঘ প্রতীক্ষা


রাত্রি ঘুমিয়ে গেলে শুধু জেগে থাকে নির্জনতা; তার আগে ঘুমিয়ে পড়ো তুমি রাত্রির কাছে একা নও সখি জেগে আছি আমি আর মলিন চাঁদ-তারা রাত্রির কাছে হয়ত পুড়িয়ে নেবে দেহে; না হলে টুকরো-টুকরো করে সিদ্ধ করবো তৈলভর্তি কড়াইয়ে ফেলে।ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেল,তুমি কী জানো? ভোরে কেন পাখিরা নীড়ে থাকে না


রুটি বানাতে গিয়ে পুড়ে গেছে হাত, তাপভষ্ম তান্দুরীর গায়ে; রান্না-বান্না এ সব মনে হতো নারীরা ভালো বুঝে... পরবাসে এসে দেখি সবই ওলট- পালট বাঙালিরা রসনা-বিলাসী সব শাদা চামড়াকে তৃপ্তি দিচ্ছে চার দশক হবে-- তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে 'চিকেন টিক্কা মসল্লা' গিলে... রুটিতো ফুলে-ফেঁপে ওঠে, যন্ত্রণাও সাজিয়ে গুছিয়ে রাখি সামি-কাবাব গারলিক নানে'র পাশে


সেই সব স্মৃতি সবই ছিল গ্রহণের বেলা, গত জন্মে যে ছিল প্রাণে সে তো যৌবনে শিখে ফেলেছে কথার ছলে রহস্যপাঠ— প্রাণের উষ্ণতা দেহ থেকে ক্ষয়ে পড়ছে ক্রোধ যৌবনতৃষ্ণা; তাই নিববে পাঠ করি আয়ূ, তোমাকে শোনাবো বলে গেঁথে রেখেছি হাড়ে গোপন মাংশ কিচ্ছার পাশে


আজো ধরিনি কারো হাত ফলে কিভাবে চলে আসে ভয়; কাঁথায় মুড়ি দিয়ে রাখি ঘুম— রাতের পর রাত, একাকী পাঠ করি শীতজন্মস্মৃতি। কিন্তু বরষা এলে তুমি বসে পড়ো দেহের ভাঁজে বৃষ্টি সেজে... ফলে বিভাজিত হতে চায় দেহ, স্পর্শের আড়ালে


নিজেকে সংযত করো; আয়নার পাশে; এ জীবন তো ফেরারি জীবন যৌবন কেটে যাচ্ছে তবে— তাই সার্কাসের মতো ঘুরে ক্রমে-ক্রমে নিস্তেজ দেহ।আর তুমি বৃষ্টি ছিঁড়ে রাখো হাতে,হাত থেকে তুলে নাও ঘ্রাণ বিরামহীন বুকে একদিন তুমি...তুমিও হবে নিজাধীন প্রাণে,তোমাকে আটকানোর অক্ষমতা আমাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে খাবে

No comments:

Post a Comment