Tuesday, September 8, 2009

দ্বিধা বিষয়ক একটি

থামাতে জানো না জানি তবুও থেমে যেতে চায় চোখ; কিংবা যেমনি জেগে ওঠে  সাতরঙা ভোজনের স্মৃতি আর আজলার মায়া- ঝুলে পড়ে উষ্ণ আধখানা লোভ-লালা অলীক বেলায়। সমূহ আশার দানা বেঁধেছে ঘর গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে নয় রসায়ন বিক্রিয়ায়। তাই আমার জন্য কাঁদে জানালার পাশে একজোড়া চোখ আর আধভাঙা চাঁদের আচল, বড় বেশি অভিমানে তেতে ওঠো শিহরিত হও…ভুল করে ছুঁতে পারিনি প্রসূতরাত কিংবা জ্যোৎস্না মিলনের সমক্ষণ, বাঁশদানা বুননের দেশে এসে হারিয়েছি গতিপথ— সময়ের শুচিবাই রোগে আটকে গেছে জানালার কাচ আর আঙুলের ভাষা; তবুও বলি—
যদি কিছু স্মৃতি কবিতার পরতে নয় বিস্মৃতি হয়ে বারবার ফোটে
আমি এঁকে দেবো পূর্বকথন আর দ্বিধালিপি যত বৃষ্টির ঠোঁটে

অ.
মাগুরার পাড়ে দাঁড়ালে মনে পড়ে দূরন্ত
জোয়ারের বেলায় আমরাও মগ্ন হতে থাকি
গভীর স্রোতের টানে,স্মরণে আসে কেবল
বৃষ্টি আর প্রবহমান জলের কথা—
দৃশ্যাবলী যত গোপন ছিলো সন্ধ্যাকাশে
ব্যাহ্যিক নিয়মে কি করে জেনে ফেলেছে শীতের সকাল
জবান খুলে কিছু বলতে পারেনি তারা; নীরবে সয়েছে জ্বালা
আমি অনুভবে জেনেছি তাদের মিলনের গোপন স্পৃহা

আ.
কষ্টকে পরিপাটি করি স্বপ্নময় যৌবন ধরে
দুঃখ যতস্খলন ঘটে জলবায়ুর গুনে
আমি তারও আগে দাঁড়িয়েছি একা মাগুরার পাড়ে
নদীর জলে ঘাই মেরে গড়াগড়ি করে আইড়
বোয়াল; শিং-মাগুরের লেজে নাড়াচাড়া করে প্রাকৃতিক
লীলার ছলে… আমি তাদের কবিতা শোনাই—
নদী আমার কৈশোর-যৌবনের বোবা শ্রোতা; নীরব সহযাত্রী


ই.
আর এখন উষ্ণতা জেনে নয় শীতের বিকেল এলে
উষ্ণ রোদে শরীর পোড়াই একাকী পুরোনো স্মৃতিগুলো
ফিরে পাবো বলে— কিন্তু কামাতুর ঢেউয়ের সাথে কখন যে
লাবণ্য হারিয়েছে দু’পাড়ে স্থির থাকা সবটুকু জল
ভাবি ভাঙাগড়ার সাথে ছুটছে ধুলোময় স্বপ্ন আর ফ্যাকাসে সময়
হয়ত অগোছালো রয়ে যাবে জীবনের অবশিষ্ট স্বাদ


ঈ.
সময়ের স্নেহ বেয়ে কখনো চলিনি তাই সূর্য সেজে
ধার এনেছি বিনিদ্র রাত আর পুরোনো দিবসের স্মৃতি
                                                অসংখ্য সন্তাপ
জন্মাবধি ছিল চাওয়া-পাওয়া আর দৃষ্টি-প্রভেদ
স্মরণে আসেনি কভু সাল-দিন-ক্ষণ রঙিন মায়া
এখন আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে বৃষ্টিস্মৃতি
আঁকা কৈশোরের জলজ্ঞান নদী


উ.
এরই মাঝে কেটে গেছে; ঘটে গেছে সৃষ্টির কত রূপলীলা আর দৃশ্য
পরিবর্তনের চাকা প্রাককথনে সে সব কথা ভাবতে গেলে মনে পড়ে
ল্যাবরেটরির কথা; জীববিজ্ঞানের ব্যবহারিক পরীক্ষায় অনিচ্ছায় আমাকে ব্যবচ্ছেদ করতে হয়েছিল কুনোব্যাঙ আর রক্তজবা ফুল সে-বিষয়ে প্রাজ্ঞতা জানতে তুমি আজো রয়ে গেলে গোধূলি ছায়ায়; দূরের মায়ায়— আরো; আরো কিছু ব্যবচ্ছেদ করতে চেয়েছি খুব গোপনে ব্যবচ্ছেদ হলে লিখা হবে বুকে জীবনের সংক্ষিপ্ত বয়ান


ঊ.
অনেক আগেই শুনেছি সহজনের কাছে কতই না পুঞ্জিভূত সুখের কেচ্ছা!
স্পর্শ পেলে আদ্রা আবেগে কীভাবে যেন লাজুক হয়ে যেত শামুকের ঠোঁট যেমনি রঙিন স্বপ্ন দেখে শিহরিত হয় যুবা রমণীরা; যৌবনের প্রথম প্রহরে অনিচ্ছায় হারিয়ে ফেলে রূপ-লাবণ্য সব চাওয়া-পাওয়া— কিছুই করার নেই ওদের জীবনের সব চাওয়া ভুলে গিয়ে জীবন সাজাতে চায় এখন শহরের নামীদামী গণিকা সেজে; কেউ-কেউ লিখছে গোপন ডায়েরি হয়ত ঠুকে রাখছে দুর্বিসহ স্মৃতি হয়ত গণিকানামা


ঋ.
তাই মোমের সামনে দাঁড়ালে মনে পড়ে সেইসব মুখ
                                    সর্বগ্রাসী জ্বালা
তবুও আগুনের আঁচে খাঁটি হয় স্বর্ণালংকার শুধু খাঁটি
হয়নি তোর মনের কথা, যত আনাগোনা… রহস্য
জমাট বাঁধা সব পথ ধরে তাই বার-বার নিকটে এসেও
ছুঁতে পারিনি তোর বোবাঠোঁট— দূরে দাঁড়ালে হারিয়ে ফেলি
বড় আদরে ফুটে ওঠা জ্যোৎস্নার মায়া


এ.
অবশেষে রেখায় না দাঁড়িয়ে সরল
সরল পথটুকু খুঁজে পাওয়া গেলো
অভিপ্রায় যত ছিল বোতামের দৃশ্য দেখে
মুখটি আড়াল হয়ে গেলো
তাই সময়ের নিয়রে একা বসে থাকি
মৌনতা নিতে তাতেও নানা রকম জলের
যদিচ্ছাটুকু গিলে ফেলে দেখি বহুজাতক
স্বভাবের লিপি


ঐ.
রমণীর চঞ্চলতায় দেখি দ্বিধাটুকু খেয়ে
ফেলেছে খণ্ড-ত্রিখণ্ড দাঁতের ঝিলিক
এ রকম হয়ত শোনা যাবে— জানা যাবে
ইচ্ছের বিপরীতে কাদের সমুদ্র জল পানে
দ্বিমত ছিল; তার বাস্তবতা মিলাতে পারিনি আজো
তবুও গূঢ়লিপি পাঠে জন্ম নিয়েছে ক্রোধ
আর আমি ঢোঁকে-ঢোঁকে গিলে ফেলেছি
অবশিষ্ট সমুদ্রের লোনাজলটুকু


ও.
কিসের অপেক্ষায় আজও আগুনের আঁচে
শক্তপোক্ত কলমটিও বাঁকা হতে চায়?
যেমনি তৈলসিক্ত বাঁশটির আকরূপ ধরে
উপরে উঠতে চায় নির্বোধ বানর— তাই অনীহা
মেখে দৃষ্টিটুকু ফেলে যাও পথে আর আমি
সে পথ ধরে বার-বার শিখতে গেছি সরল সমাধান আর
পাটীগণিতের রীতি


ঔ.
এমন ব্রজবুলিতে ফলবান যারা— ব্যঞ্জনা খুঁজিনি
কভু জাদুমন্ত্র চোখে; কেননা যদি কখনো অনিচ্ছায়
ভেঙে পড়ে আমাদের প্রণয়ের স্মৃতি আর শামুকের লাজুক
জলঠোঁটের কথা; তাই বিনাশী জীবন নিয়ে ছায়াতে
বাঁধি ঘর স্বরলিপি জপে—
দ্বিধাটুকু তোমার কাছাকাছি রেখে; মেখে

স্বপ্নাকাঙ্ক্ষা

সবুজ পাতারা যৌবনে দূরে-দূরে থাকে ঠিক তুমিও যেভাবে আড়াল করেছো মুখ
                                       গোপনতা ঢেকে
দূরত্ব খুঁজে কি করবো এখন; তুমিই বলো—
দূরত্ব এঁকে কবেই তো গিলে ফেলেছি বুকের জ্বালা
তাই ভাবছি একা বসে ডালিম গাছে নয় ঝাউ গাছের তলে
ভাগ্য কি মানুষেই গড়ছে; মানুষ কি গড়ে নিতে পারে?
তুমিও ভাগ্য সন্ধ্যানে সব ছেড়ে চলে গেলে অবশেষে

গাছের মিলন হলে ঝরে পড়ে পাতা; নতুন পাতা জন্মে
আমাদের কাঙ্ক্ষা আজো রয়ে গেলো স্বপ্নে

ফেরারি পর্ব ১

গাছে-গাছে সবুজ পাতা চোখে পড়লো এত দিন পরে ডালে-ডালে বসেনি কোনো পাখি— সব ঢাকা বরফে
কতদিন হলো শুনিনি তার গান রঙিন স্বপ্ন নিয়ে শিষ দেয়নি
                    বউ কথা কউ; কোকিল-শ্যামা আর দোয়েল
অন্ধকার রাতে একাকী হাঁটি; মনে হয় সব যেন সুনসান
কোথাও শুনিনি শিয়াল-শকুনের ডাক, কোণোব্যাঙের মাখামাখি—
ঝিঁঝিঁ পোকার গান আজো খুঁজে ফিরি কোথাও শুনিনি

সারাক্ষণ লুকিয়ে রাখি ভয়, কেউ জানে না কেনো, কি কারণ
তুমি তো জানো কার জন্য বেছে নিয়েছি এই ফেরারি জীবন

টবে সাজানো লাল-শাদা-বেগুনি গোলাপ চেরিফুলে—
ফুলে কোন গন্ধ নেই নন্দিনী; তার উৎস খুঁজবো কি মূলে
ডানা হলে উড়ে যেতাম কবেই প্রিয়বাংলায়; সবকিছু ফেলে

আঁচ

কত কাঙ্ক্ষা লটকানো থাকে; কত স্বপ্ন ঝুলে আছে একা                                                                       শূন্যে
কত যুক্তি-তর্ক শ্রুতিমধুর হয়, কত নির্জনতা এক হয়ে
মিশে পড়ে গাত্রদাহে— কিংবা লেকের পাড়ে


মনের উপর কি জোর করা ভালো-তুমিই বলো
দেহ শুধু নড়ে-চড়ে ওঠে নিশুতিরাতে… তুমি একা—
একাকী হলে আমাকে উলটে দিও পাশবালিশের কোলে
জানো নিয়ন ভাবনায় দেহ টানাপোড়েন আঁকে
                                                      স্পর্শবিহীন আঁচে

নির্বেদ

রাত্রি খুঁড়ে নিলে পেয়ে যাবো নির্বেদ; ফলাফল হলুদ শস্যদানা তুমি অপেক্ষায় থেকো জানালার ফাঁকে বুঝবে কেন তন্দ্রাহত চাঁদের গায়ে
স্বপ্নবিদ্ধ চোখ দু’টির অনুতাপে পুড়ে অস্পর্শ অভিমান নিয়ে

রাত্রি না খুঁড়ে দিলে পিছু নেবে অন্ধকার; অগোচরে ফুটে যাবে চন্দ্রিমাফুল
রাত্রি ফুরিয়ে গেলে তুই, তুই হ’বি একা আমার কলঙ্কফুল— তাও না?

ফিরবো না বলে তো এসেছি একা; স্বপ্ন বিক্রি করছি বহুমূল্যে শুধু বিক্রি
করিনি এখনো বুকে আটকানো অসংখ্য বেদনা—
তুমি তো স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছো সারাক্ষণ; ছায়ার মতন
কখনো বুঝতে শেখনি কে কার ভেতর জমা রেখেছে পরিপাটি করে ক্রোধসহ
                                                         অসংখ্য ঘৃণা


ভোর হলে নির্বোধের মতো তোকে নিয়ে ভাবি-রাত্রিঘোর কাটে না
দুপুর গড়িয়ে রোদ নামেনি তাই তুই ছিঁড়ে নিলে বৃষ্টিসহ আরো কিছু জল—
                                                             ফোটানো যন্ত্রণা
রোদ ছুটুক তার মতো করে কিচ্ছু বলবো না…

পথভোলা পথিকের ডানায় ভোরের পালক

যাত্রাভিমুখে পথভোলা মুখগুলো স্ফীত হয়ে গেলো তুই দাঁড়িয়ে ছিলে নির্মোহ টানে জানালায়— গ্রিলের শিঁকে
ক্লান্ত ভাড়ে নুয়ে পরা চোখ দু’টি কবে যেন বেদনার্ত হলো
অভিমানি জ্যোৎস্নালো বিজুলির মতো চমকাচ্ছে চারদিকে

বেলা শেষে যারা ঘরে ফেরেনি তারা— তারা পথভোলা পথিক
তাদের ডানায় ঝরে গেছে কবে পাখি তাড়ানো ভোরের পালক

ফেরারি পর্ব২

দ্বিধা জাগেনি— তবু ছুঁয়ে গেলে অবশেষে                                               তাদের শ্লেষে
আকাশে যতদিন মেঘ জমে, ততদিন বৃষ্টিপাত হয়নি
বৃষ্টির রূপকথা কাব্য-কবিতায় পড়েছি কিছু-কিছু
                                   বাকিটুকু লোকমুখে শুনি

আমি আঁকছি মেঘের রূপ-প্রকৃতি; তুমি ঢাকছো আত্নগ্লানি
ইচ্ছে হলে কি সব পাওয়া যায়; সব সাধ কি এখনও জানি—
ছুঁলে তুমি কাঠখণ্ড চুম্বকের আগে; তবু কারো দ্বিধা জাগেনি
মনোতলে চোখ খুলে রাখো— দেখো এখনো তৃষ্ণা মিটেনি

শোনো, যেখানে প্রদীপ জ্বলে সেখানে না-যাওয়াই ভালো; ফলে
শ্রাবণ এলে তুমিও তাড়াগ্রস্ত হও বৃষ্টিছায়ায়; জানালা খুলে

কাঁচা মাংসের ঘ্রাণ

বৃষ্টি হলে ঘনমেঘ কাঁদে; হেসে ওঠে পুকুরের জল বৃষ্টি হয়নি তাই রোদে পুড়ে জল, ছায়া বাঁধা বনে
তোমাকে গ্রহণ করিনি তাই কান্না জ্বলে-পুড়ে মরে
                                                      করাত কলে


তুমি তো জানো— করাত কলে কাঠ চেরাইয়ের শব্দ
ভালো লাগে খুউব; তাই আমাকে ঘিরে ফেলেছে
                                  এখন কাঁচা মাংসের ঘ্রাণে
তোমাকে নিয়ে করাত কলের শব্দ শুনিনি কতদিন হলো
সেকথা ভাবতে-ভাবতে আবার শীত এসে গেলো
শীত তো সহ্য হয় না; গা শিরশির করে পবনে
আমাকে গিলে ফেলেছে কাঁচা মাংসের ঘ্রাণে

ভাগ্যরেখা

লক্ষ ঠিক করে সবাই স্বপ্ন দেখে এগোতে চায় তার মতো করে গড়ে তুলে স্বপ্নবাগান

ভাবে টাকা-কড়ি কবে হবে; অপেক্ষা আর কতদিন
চাওয়াতে প্রথমসারি; বাড়ি-গাড়ি-নারী রঙিন দালান

তার ব্যতিক্রম কেউ হয় হয়ত নয়; শুধু সময় কথা কয়
আমিও বান্ধিব বাড়ি— খুব কাছে দাঁড়ানো শমন

একদিন হাতরেখা গুনে কিছুই পাইনি—
অবিরাম বৃষ্টি ছিল সে দিন


কিছুই ভাবি না সখি, জানতে ইচ্ছে করে না কিচ্ছু এখন
শুধু ভাবি আয়ু কত হবে; তুই ফিরে আসবি কোনদিন

ফেলে আসা পথ

হাঁটতে হাঁটতে যদি হারিয়ে ফেলো পথ তবে— তবে গতি পথ দায়ী হবে কেনো?
তার জন্য দায়ী করো পা; তোমার আকাঙ্ক্ষা

দৃষ্টি খুলে রাখো দূরে; হয়ত ফিরে পাবে পথ
সাথে পাবে রোদ-জলের পাশে মেঘের হাওয়া
আমি তো দূরে ফেলে এসেছি দূরের গায়ে—
মাটির গন্ধ; সহচরের মায়া

Monday, September 7, 2009

ফেরারি পর্ব ২

তুমি সুন্দর; তুমি আত্নরহিত— জানি না খণ্ডে খণ্ডে তুমি রাতের উষ্ণতা খুঁজে ফিরো কেনো? কেন রাত্রি খুঁড়ে তুলো দগ্ধ জ্বালা, পত্র-পাত্রে অর্ধেক জলের  তৃষ্ণায়... তৃষ্ণায় ঝুলে পড়ো তপ্তবাহুতে রক্ত-মাংশের ঘ্রাণে ঝরে পড়ছে জল তার অর্থ জানি না বলে কে যেন দিয়ে গেল দ্বিধা


কারো অজুহাতে নয়; এখন নিজেই করাত কলের পাশে মাছ-মাংশ টুকরো টুকরো করি মুঠোভর্তি দীর্ঘশ্বাস ঝেড়ে; দুঃখ যত একাকী পুড়ে করাত কলের পাশে— তুমি সে দৃশ্য দেখার আগে, আগেই হয়েছো নিরাকার; রাত্রি ভুলে হয়েছো  সত্তাহীন; তাই মোমের আদলে গলে যাও তুমি;গলে যায় যন্ত্রণা যত... কষ্টকে জমতে দেই না কখনো, হাড়গোড়ের মাঝে সবটুকু কেটে ফেলি করাত কলের পাশে


আমার দু'হাতে বরফের জল; আঙুলে লেগে আছে খরা তার অর্থ কেউ বুঝবে না অর্ধেক লেগে আছে প্রাণে, করাত কলেই সব জানে... যারা করাত কলে  দৃষ্টি ফেলে রাখে তাদের জন্য মায়া হয় কম; তারাও কি? অজান্তে সব কষ্ট ছুঁড়ে দিতে চায় করাত কলে



তুমি রাত্রি নৃত্যময়ী; তুমি রাত্রিতাড়িত ভ্রান্ত পথিক; লাফে-ঝাঁপে নুয়ে পড়ে স্বপ্ন, রাত্রিডানায় রাত্রিকে টেনে হিঁচড়ে করেছো নিষ্পাপ রাবারের মতো আয়ূ নিয়ে জেগেছো দূরে; অন্ধকারে জানি সুখে-দুঃখে আমৃত্যু সংলিপ্ত ছিলে আয়নার পাশে


কার আঙুল ছুঁতে লেগেছিল দ্বিধা; কাকে ছুঁয়ে দেখার আগে ঝরেছিল জল; পায়ের পাতা তোমার স্তব্ধতা নিয়ে জেগে ওঠে স্পর্শ; শিউরে উঠি আমিসহ শিরা-উপশিরা তোমার আকাঙ্খা অপূর্ণ রাখিনি বিনিময়ে কিছুই চাওনি তাই রতিভ্রমে খুলে পড়েছিল লাজ রাতের উদাসীন হাড়লিপি... দেহের উষ্ণতা


জীবনের দায়ভার রেখে খামচে ধরো আয়ূ; পাজামার ফিতা হয়ত নিয়ম ভাঙতে যাওনি তাই চুম্বনের জন্যই... শুধু চুম্বনের জন্যই এত দীর্ঘশ্বাস... দীর্ঘ প্রতীক্ষা


রাত্রি ঘুমিয়ে গেলে শুধু জেগে থাকে নির্জনতা; তার আগে ঘুমিয়ে পড়ো তুমি রাত্রির কাছে একা নও সখি জেগে আছি আমি আর মলিন চাঁদ-তারা রাত্রির কাছে হয়ত পুড়িয়ে নেবে দেহে; না হলে টুকরো-টুকরো করে সিদ্ধ করবো তৈলভর্তি কড়াইয়ে ফেলে।ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেল,তুমি কী জানো? ভোরে কেন পাখিরা নীড়ে থাকে না


রুটি বানাতে গিয়ে পুড়ে গেছে হাত, তাপভষ্ম তান্দুরীর গায়ে; রান্না-বান্না এ সব মনে হতো নারীরা ভালো বুঝে... পরবাসে এসে দেখি সবই ওলট- পালট বাঙালিরা রসনা-বিলাসী সব শাদা চামড়াকে তৃপ্তি দিচ্ছে চার দশক হবে-- তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে 'চিকেন টিক্কা মসল্লা' গিলে... রুটিতো ফুলে-ফেঁপে ওঠে, যন্ত্রণাও সাজিয়ে গুছিয়ে রাখি সামি-কাবাব গারলিক নানে'র পাশে


সেই সব স্মৃতি সবই ছিল গ্রহণের বেলা, গত জন্মে যে ছিল প্রাণে সে তো যৌবনে শিখে ফেলেছে কথার ছলে রহস্যপাঠ— প্রাণের উষ্ণতা দেহ থেকে ক্ষয়ে পড়ছে ক্রোধ যৌবনতৃষ্ণা; তাই নিববে পাঠ করি আয়ূ, তোমাকে শোনাবো বলে গেঁথে রেখেছি হাড়ে গোপন মাংশ কিচ্ছার পাশে


আজো ধরিনি কারো হাত ফলে কিভাবে চলে আসে ভয়; কাঁথায় মুড়ি দিয়ে রাখি ঘুম— রাতের পর রাত, একাকী পাঠ করি শীতজন্মস্মৃতি। কিন্তু বরষা এলে তুমি বসে পড়ো দেহের ভাঁজে বৃষ্টি সেজে... ফলে বিভাজিত হতে চায় দেহ, স্পর্শের আড়ালে


নিজেকে সংযত করো; আয়নার পাশে; এ জীবন তো ফেরারি জীবন যৌবন কেটে যাচ্ছে তবে— তাই সার্কাসের মতো ঘুরে ক্রমে-ক্রমে নিস্তেজ দেহ।আর তুমি বৃষ্টি ছিঁড়ে রাখো হাতে,হাত থেকে তুলে নাও ঘ্রাণ বিরামহীন বুকে একদিন তুমি...তুমিও হবে নিজাধীন প্রাণে,তোমাকে আটকানোর অক্ষমতা আমাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে খাবে

দুলছি একা সুতো ছিঁড়ে

কতটুকু দুঃখ পেলে তুমি চুপচাপ থাকো কতটুকু কষ্ট পেলে নারীরা নীরবে কাঁদে
কতটুকু আশা জাগালে তুমি স্বপ্ন দেখো
                                     বাতাসের ফাঁকে
তুমি দূরত্বে দাঁড়ালে; দূরত্ব মনে হয় তিন ফুটেরও বেশি
তাই মৃদু বাতাসে কাঁপছে শরীর; রঙিন ঠোঁট
আজ তবে নাই-বা ফুটুক শিকড়-বাকড়হীন
                                             স্বপ্নকাঙ্ক্ষাফুল

যতটুকু পূর্ণতা নিয়ে জেগেছে জল; তৃষ্ণার্ত সমুদ্রজল
সন্ধ্যা নেমে গেলে ভুলে যাই সবকিছু শুধু ভালোলাগা বাদে
সব কি ভুলে যাওয়া ভালো; তুমি তো বিপরীতে চলো
তাই বেলা শেষে ক্লান্তির ডানা ঝেড়ে পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে
ফিরছে তাদের নীড়ে; আমাকে জাগিও না তুমি—
                                   দুলছি একা সুতো ছিঁড়ে

বিবিধ সংলাপ

তোমার দু-চোখের ক্লান্তি দূর হলো কবে চুপ করে বসে ছিলে সবুজ ঘাসে—
কি যেন খুঁজছিলে আনমনে; তাই জলে চোখ মুছে
                          ফেরারি রুমাল

জল গড়িয়ে পড়লে বাধা কই নিবিড় অন্ধকারে
বৃষ্টির মুখ দেখিনি কতদিন হল— সে সব ছবি
স্মরণে এলে কি চোখের জল গুনে রাখা যায় চোখের পাড়ে

নন্দিনী

নন্দিনী তুমি ফুটে আছো একা বেদনার্ত চোখে দুঃখ পেলে বলো চোখ থেকে তুলে নেবো জল
বৃষ্টি নামার আগে মুঠো ভরে নেব বর্ষা-শ্রাবণ

নন্দিনী কড়াই হাতে নেই; কাঁচা মাংসের গন্ধ গায়ে
মেখে জিরিয়েছি বহুদিন; হয়ত রবে বহুকাল
তুমি বৃষ্টিফুল গেঁথেছো চুলে; উষ্ণতা নিতে জেগেছে নাকফুল


তুমি ঠিক করে বলো-কতটুকু ভালো আছো পতনের সুরে
অপেক্ষা কেবলি গা ছুঁয়ে নামছে গোপনে; নির্মম
ভাগ্যরেখার দ্বারে

লক্ষ্য

কে যেন চলে গেল বেলা শেষে বৃষ্টির মতো হঠাৎ; ঘূর্ণিবাতাসে

আমাকে লক্ষ্য রাখছে ওই দু’টি চোখ আশ্বাসে
মোহবন্ধনে; তার পাশে

ফেরারি পর্ব ৩

আলোর ভেতর আলো জ্বলছে হরহামেশা কে না জানে আমি জ্বলিনি কভু কারো আঘাতে;খাল-বিল-নদী-পুকুর পানে
রোদের পাশে পুড়ে কঙ্কাল হবে রোদ; স্বাভাবিকভাবে
রোদ ছুঁবে না কেউ একা; রোদের তৃষ্ণা ছায়া হয়ে যাবে

নীল আকাশ ভালোবাসো জানি— গোপন রাখো বৃষ্টিপাত হলে
রোদ আর খরা


আমি প্রতিদিন দেখি আলো ছাড়া পৃথিবী জ্বলে ওঠে ভোর বেলা
বিকেল হলে তুমি ফিরে এসো; পাখিরাও নীড়ে ফিরে আসে
ফিরিনি আমি আর আমার ধূসরতা

সহজ

তারপরও পেয়ে বসে কতরকম গূঢ়ে; কার জন্য কে পড়ে থাকে একা নীরবে-গোপনে। যার জন্য ফেলে আসা যায় আরো কিছু সময়
সে কি তার কথা শুনে নেবে রোদের আলোয়; কার কাছে ধার নেব কষ্ট অসুখ; এজীবন অগুছালো— তাই সবাই বিমূখ। নিঃশ্বাসে কষ্ট বাড়েনি… সবকিছু মেনে নেই সহজভাবে; সহজেই

বৃষ্টি আবার ফিরবে বলে

অন্ধকার হলে ভয় জাগে মনে; হয়ত অনুভবে তাকে পাবে দেহ ছুঁয়ে যাওয়া জড়তা উঁকি দেয় চারদিকে— বিস্তর ভাবে
তুমি শিখিয়েছো আত্নহননে কবে যাব; আর্দ্র হবো কবে—
জিহ্বা কি জানতো জল পানে তারও তৃষ্ণা চলে যাবে

যারা অন্ধকার চিনে নেয়; তারা কি দুঃখ-যন্ত্রণা খেয়ে নিলে
টের পাইনি বৃষ্টিপর্ব কবে শুরু হলো; কারা গোপনে চলে গেল
এবার তুমিই বলো বৃষ্টির জন্য কোন ঋতু বেছে নেবো—
কোন ঋতুতে বৃষ্টিপাত না হওয়া আমাদের জন্য ভালো

সংলাপ পর্ব

কখনো ইচ্ছে করে নয়; বেলা গুনে চলে যায় তুমি ফিরলে না বলে— রাত্রি পুড়ে নদী হল কবে—
আমি তো দাঁড়িয়েছি গুহায়; দূরে রেখেছি ভয়
হয়ত ভাবছো বসে নির্জনতা; আড়ালে-আত্নায়
গোপন প্রলাপ কেউ জানবে না; শুনবে না নিজ ছায়ায়
প্রসারিত করো হাত দু’টি নিজস্ব ভঙ্গিমায়

অক্ষমতা

রোদের কাছে যদি ছায়া ঋণী হয় বৃষ্টির কাছে তবে মেঘটাই কাল—
                        বাকিটুকু আড়াল
হাঁটতে গেলে কি যেন পড়ে থাকে পিছে
হাত লুকালো কই; তাকে দেখে বলো—
                        আনাচে-কানাচে
একদিন পুড়ে যাবো আমি— ফুরিয়ে যাবে
                যতকিছু; যত পিছু টান

যোগফল

চিন্তা ছুঁয়ে দেখা যায় না— কি বিস্ময়! ভাবতে গেলে ভাবনা কত রকম হয়
ভাবনাকে ওজনে নয়; ওজন বিহীন আঁকি
বাকিটুকু চিন্তা করে দেখি—

ভাবনা গণনা করে সহজে কিছু মিলে না
সহজে কোনোকিছু ধরা যায় না
তাই ভাবনা-চিন্তার যোগফল কখনো মিলে না

পরশ

সাবধানে চলো পথে কাদা                ওই যে দেখছো কে-সে বাঁধা               মানুষ শিকল ভেঙে আসে শুধু মায়ার টানে
কাদায় খেলেছে শিশুদল                      জীবন ভাবে কত সরল
            ভাবছে কি তারা কঠিন বাস্তবতা আছে জীবনে
সবাই কি পথ মেপে চলে               একা নিজ দোলনায় দুলে
             যারা চলে গেছে ওই পথ ধরে দৃশ্যের নিকটে

লাবণ্য ছুঁয়েছি একা… প্রীতি                ভয় শুধু দিবসের স্মৃতি
           যদি দূরে চলে যাও দেখো আমি লেগে আছি ঠোঁটে
কাদা যদি মিশে যায় তবে                নিঃশ্বাস নেবে তৃপ্তি ভেবে
         স্বপ্ন আর বাস্তবতা ঘিরে রাখো ভিন্ন স্বাদ পাবে

নিজস্ব স্বীকারোক্তি

আমি পুঁতে রাখি কথকতা— কিছু শূন্যতা, যা অনিবার্য বলার ছিল হয়ত বলে নেয়া যাবে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এমনিতে; এমনি।নির্জনতার বেড়ে ওঠো তুমি বেড়ে ওঠে অপারগতা; আড়ষ্টতা। যেটুকু ছুঁয়েছো ততটুকু বিশ্বাস বাদ-বাকি বৃথা— ব্যর্থতা।তুমি যদি পুড়ো অঝোর ধারায় আমি তুলে রাখবো জল বৃষ্টিরনাম ধরে; অতিযত্ন করে লাল-নীল বেগুনি খামে।তুমি বারবার ছুঁয়েছো এক-টুকরো স্বপ্ন, বাকিটুকু মেঘের অধীনতা— আমি আমার জন্য পুঁতে রাখি জল আরো— আরো কিছু শূন্যতা

পাখি ভাবনা

কী রকম ছুঁয়ে দেখা যায় ভয় তা জেনে অঙ্গগুলো মৃদু দুলে ওঠে
কে কাকে ছুঁল জানি না— বুঝলাম
                                হাতের সৌকর্যে
আমাকে ছুঁবে না কেউ; শরীর কেঁপে ওঠে

কীভাবে উড়তে শিখে পাখি— ছুটে যায় নীড়ে
আশাহত পাখিনী একা বসে কাঁদে দূরে

দেনা-পাওনা

কী করে ছুঁয়ে দেখব শরীরের ঘ্রাণ কোথায় দাড়ালে ছুঁয়ে যাবে শবদেহ
                                       গার্হস্থ্যজীবন
ফলে ছুঁতে ছুঁতে হারায় গতিপ্রবাহ আর—
ত্রিবর্ণে ফুটে ওঠা হাতের রীতি

কীভাবে ছুঁয়ে দেবো তোমার— অভিশপ্ত ঘ্রাণে
আজো নিঃশ্বাসে পুড়ে অর্ধেক দেহ; বাকিটুকু প্রাণে
দূরে দাঁড়ালে বহু দেনা পড়ে থাকে অনুভব করি
গোপনে চলে গেলে তাই পাওনাটুকু আজো বাকি

ভবঘুর

কিছু কথা শোনো ওহো রাত্রিরে বলি সব বাজি রেখেছো ঝিনুকের খোলে তবু—
                                     তবুও চুনকালি
ফরিয়াদ করি তব তুলে ধরো অঞ্জলি
ধনেপাতায় চোখপাতা; ডাটাশাকে টানা-টানি
সংশয় ঠোঁটে রাখোনি তবু বলো অশ্রু তো সহজ পানি


কিছু কথা বাকি থাকে; কিছু স্মৃতি পুড়ে মরে
দু-চোখে জল রেখে দূরে যাও-বহুদূরে
দ্বিধা-দ্বন্দ্ব লেবুঘ্রাণ; তুমি ছাড়া সবই দ্বারে
                                     রাত্রি দেখো ভবঘুরে

এসো

স্পর্শে কোনো তৃপ্তি নেই জেনেছো আগে; তবে এসো কিছুদিন রোদে শরীর পোড়া্ই, সুযোগ বোঝে অনুবাদ করি স্পর্শরীতি

এসো স্পর্শ ছাড়া অন্যভাবে নির্মাণ করি নিজেকে, আর কিছু রাত্রিকে
গিলে ফেলি চুম্বনে… তারায়-তারায় রঙধনু মেখে

এসো চন্দ্রিমারাত্রিকে তাড়া করে শিহরিত হই; স্পর্শ ছাড়া পুনরায় জাগিয়ে তুলি গোপন ঢেউ— এসো নিঃশ্বাসের ভেতর ডুবে মরি; চুষে নেই মৌ…

মাছরাঙাঠোঁটে

তুমি নীতিপ্রবণ ছিলে, ফলে শ্রাবণ জলে হয়েছো বিলীন… সবাই ভুল বুঝে

আমি ফিরে যেতে চাই, যেভাবে সূর্য্য ডুবে গেলে
চারিদিকে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে দৃশ্যপটে

তুমি নীতিপ্রবণ তাই জলে ঘুরে দাঁড়াও চক্রাকারে
মাছরাঙাঠোঁটে

পরবাসে এসে

এতো ধোঁয়া, এতো ধোঁয়াশা বিস্ময় আঁকা চারদিকে তাই মুঠো ভরে রেখেছো জল ছিটিয়েছো চারপাশে
মানুষ মানুষের পাশে মিলেমিশে থাকে
নির্দ্বিধায় মিশে পড়ো তুমি তারারাত্রির ফাঁকে

রাত্রি ফুটে গেলে সময় গুনে রাখো তুমি
পাশাপাশি বসে, আমি গুনে রাখি স্মৃতিসহ
সাল-দিনক্ষণ পুরো বারোমাস


কখনো ভাবিনি, ভুলে যাবো আমি স্মৃতি-স্বপ্ন-কথা রাত্রি শেষে
এই ঘোরে আক্রান্ত সখি স্বপ্ন ঝুলে গেছে পরবাসে

তুলোমেঘ

ঘন কুয়াশায় ভোরের শরীর আর গ্লোবালস্মৃতি তুমি কি দেখেছো কুয়াশা ছোঁয়া মাত্র জল; না ছুঁলে হিম!
চোখ মেলে দেখি জলের পাশে শুয়ে আছো
তুমি; মনে হয় চির চেনা সবুজ ঘাসে ঢাকা
মনোলোভা স্মৃতি আর শাদা আবরণ
বৃষ্টির গায়ে রিনঝিন শব্দ বাজে তাই দেখি শিশিরের জল নয়
সখি বরফের কণা। তুমি কি জানো? এই শীতের
দেশে বরফ গলে না তাই আর্দ্র আবহাওয়ায়; আমি যে বার বার
শুষ্ক হতে শিখেছি তুলোমেঘ দেখে

হাইহিল জুতোর তালে

মিশে আছো তুমি নির্জনে, একা নীরবে কেউতো জড়াতে চায় না অপ্রয়োজনে
তাই বাতাসে ওড়ে শ্বাসকষ্ট, দুঃখ যত নীরবে পুড়ে
অপেক্ষা কেবলি দীর্ঘতর হয় নিস্তব্ধ রাতে

আজো মিশে আছো একা— শব্দে নিঃশব্দে
বাতাসে ওড়ে ঘন-কালোচুল, হাইহিল জুতোর তালে
স্বপ্ন দেখে ঝুলে গেছে চোখ— তবু যাইনি তোদের ভুলে

কত স্বপ্নে জাগে গোধূলি প্রভাত

গোপনে নাড়া দাও তুমি— গেঁথে নাও চুলে গ্রীষ্মঋতু তাই বরফ গলে না, গাছে-গাছে সবুজ পাতা দোলে
পাখির কলতান নেই; নেই গন্ধ শাদা হলুদ ফুলে
ফেরা হয়নি বাড়ি মেঠুপথ ধরে, মাথা রাখিনি কতদিন হলো
                                                           মায়ের কোলে


গোপনে নাড়া দাও তুমি, তবু ছুঁতে পারিনি বৃষ্টির হাত
আমি গেঁথে নেবো জলে লাজুক চোখসহ আধশোয়া রাত
কত ব্যথা মিশে আছে দেহের ভাঁজে কত স্বপ্নে জাগে গোধূলি প্রভাত

ভালোলাগা নন্দিনী

যারা এসেছে তারা সদায় করেছে কেউ কেউ টাটকা শাক-সবজি বয়স্ক হলে সুপারী-পান

এক বিকেলে এসেছো তুমি কখনো তো দেখিনি আগে
কিভাবে বিনে পয়সায় কিনে নিলে অবুঝ মন

প্রতিদিন কত মুখ দেখি, কত কথা বলি
কেউ তো ওভাবে মনে দাগ কাটেনি—
আমি তো বৃষ্টির দিকে মরিয়া ছুটছি
দু'হাতে রেখেছি এঁকে জলে ভেজা শ্রাবণ


আর তো দেখা হলো না আমাদের চুপি চুপি, কোনো দেখা হয়নি?
ডাইরি লিখি প্রতিদিন যত ভালোবাসা; ভালো থেকো তুমিও এক নন্দিনী

সবুজ ক্লোরোফিল

ঘুরতে-ঘুরতে যারা ঘর বাঁধেনি, স্বপ্ন তাদের বনাঞ্চল তাদের দু’চোখে মিশেছে একপশলা রোদ এঁকে-বেঁকে
অশ্রুতে কারো মুখ ঢাকতে দেখিনি—
ফলে তুমি জলে খুলে ধরো ভেজাচুল

পাখির কলতান শুনে গাছে-গাছে জমছে কোলাহল

অবশেষে যারা ছুঁয়েছে অঞ্জলি; তাদের দু’হাতে ফুটেছে বৃষ্টিফুল
চূড়ার গভীরে ভাসছে জল-পাতা চন্দ্রমেঘ
এভাবে তুমিও হয়েছো সবুজ ক্লোরোফিল

প্রবাসিনী

নতুন করে ভাবতে ইচ্ছে করে না সখি
 পরবাসে এসে— যত সব এড়িয়ে চলি
ভয়ার্ত বাসনা উড়ে বেড়ায় দু’চোখের ফাঁকে
লোভ হয়নি কিছুতেই শুধু অস্থিরতা বাড়ে


তুমি বৃষ্টি রূপে হয়েছো পরস্পরা রেখেছো গ্লানি
অন্যের ঘাড় চেপে তুমি; তুমিও হয়েছো প্রবাসিনী

হিমে পুড়ে চুল

তুমি উড়াও আউলা চুল, খুলে ধরো খোঁপা চেয়ে দেখো স্পর্শ ছাড়া কিভাবে তেজে ওঠে লোনাজল
কিভাবে জলে-অনলে ফোটে তোমার ছায়ার নীরবতা

তুমি কি জানো তোমার আউলা চুলের ভেতর
কতটা হতভম্ব ছিলো দখিনা হাওয়া আর
                                 রোদঘন মেঘের দল


ছুঁলে তুমিও হিম বরফ থেকো; তাই হিমে পুড়ে আমি কংকাল

ব্যবধান

ভাঙন দেখিনি শুধু বন্টন দেখেছি বারবার ভাঙতে-ভাঙতে হ্রস্ব হলো সময়; এভাবেই
সীমিত অনুভূতিগুলো তাড়া করে হাবাবোবা হৃদয়
তাই বলে কী রোদপোড়া ছায়া স্থানচ্যুত হওয়া ভালো
                                               তুমিই বলো—
গোধুলির পরে স্বপ্নকাঙ্ক্ষা পুড়ে খরস্রোত জলের তলে
মনে পড়ে কোন একদিন তুমিও হাত না বাড়িয়ে লুফে
নিলে আরো কিছু সময়; ব্যবধান রেখে দূরে দাঁড়ালে

নদীজল ফুটে অবিরাম

ঢেউয়ের থরে-থরে আঁকা নদীবাসস্মৃতি তুমি জলে ভিজলে ব্যথা লাগে; দুঃখ হয় না প্রীতি


ঢেউয়ের টানে উঠে দাঁড়ায় মাতাল স্রোত নদীপাড়ে
শৈশব কেটেছে মাগুরা নদীর পাড়ে যৌবন এসে ঠেকেছে
                                             টেমসের পাড়ে


সময়ের ব্যবধান দু’রকম তাই নদীজলে দেইনি সাঁতার
তোমার মোহদৃষ্টিতে ফুটে ওঠে জল; ফুলে ওঠে বেদনা; হাড়

তুমি পাশে নেই বলে উষ্ণতা নেই, ঝরেনি শরীরের ঘাম
চারিদিকে স্তব্ধ ছায়া— পোড়ামনে নদীজল ফুটে অবিরাম

শীতনিদ্রা

কতটা ওজন জেনেছো তুমি বন্দরে এসে কতটা শিখেছো ভালোবাসাবাসি অগুচরে
                                      এলোমেলো ঘুরে
আমি তবে কেনো যবো দূরে; শীতনিদ্রা ফেলে

তুমি বরং ফিরে এসো এই পথ ধরে
দেখবো কার উষ্ণতা নিয়ে জেগেছে শীতনিদ্রা
                                               নগর-বন্দরে
     

ভিনদেশে এসে

যেভাবে বেঁচে আছি ভিনদেশে                           চারদেয়াল ঘিরে
ঠিক যেন জীবন চুরি করে বাঁচা
আর আসট্রেতে লুকিয়ে রাখা তৃপ্তির শেষ
অংশটুকু মুল্যহীন— বোবাতামাকপাতা

আমার অস্থি-মজ্জায় নির্মোহ টান ধরেছে; স্বপ্ন বাঁকা
তুমিও এই ভিনদেশে এসে হয়েছো কারো আদরের
                                                     ধ্রুববৃষ্টিসখা

বরফের তলে

ভাবনা মেলাবার আগে চলে গেলে তুমি রাত পেরোলেই কালো হলো জানালার কাঁচ
তবু তুমি উড়িয়েছো স্বপ্ন জানালার ফাঁকে
দু’হাত তুলেছি মাঝরাতে, কিছুই জমা রাখিনি
                           নিদ্রাতাড়িত শিশিরের জলে

ভাবনা ভেঙে হারালো কই? তুমি কত দূরে হাত বাড়ালে
তুমি ফিরে এসো ঝড় তুলে গায়ে; দাঁড়াও স্পর্শের বদলে
জল আগলে রেখো বৃষ্টি; বরষারাত হলে বরফের তলে

সানগ্লাস

চোখ তুলে দেখো খোলা আকাশের নিচে কেবলি রাত্রিভারাতুর তাই তো তোমার চোখে-মুখে স্বপ্ন জেগেছে
সকলেই প্রাপ্তির দানা খুঁজে আগে পিছে
আমি এতটুকু বুঝি না; যতটুকু বুঝে বোবা গাছে

শুধু চেয়ে দেখি তুমুল বৃষ্টিতে শ্রাবণের পোড়া দীর্ঘশ্বাস
হাইহিল জুতোর তালে দুলে ওঠে স্তন… দৃষ্টি কেবলি পরশ
বুকের ফাঁকে আটকানো থাকে রঙিন সানগ্লাস

ছায়া

সব পাখি ভর করে উড়ে যায় ডানায়
আমি তার ছায়া অনুসরণ করে হাঁটি
মু্ক্তি পাবার আশায়— যদি ছায়াও মুক্তি পায়

তুমি যদি মুক্ত হতে চাও ডানা চড়ে ওড়ো
চোখ ভরে দেখো; কতদূর উড়ে গেছে ছায়া,
বাঁধা পড়েছে কোন গাছের পাতায়

আমিতো জ্বলছি একা— সান্ত্বনা পেয়েছি
নিজের অর্জিত ছায়ায়

খয়েরি ডায়েরি থেকে নেয়া

চু’য়ে চু’য়ে নামছে দুঃখ, ঝরে পড়ছে গ্লানি বহু আগের তাই ঝরে-পড়ার কাব্য কখন থেকে লিখতে শুরু করেছি আজ
আর ঠিক মনেও পড়ে না— তাই এখনও ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাকে
ঠোঁটের সমূহ লাজুক জল

এবার তবে খসে-পড়ার দৃশ্য দেখে ডাইরি লিখবো, হয়ত
অজান্তে শুরু হয়েছে তাই আমার পছন্দ এখন বৃষ্টিকে
ছুঁয়ে দেখা নয়, ভালো লাগে মেঘের রূপকথা। প্রতি রাতেই
একপৃষ্টা করে ডায়েরি লিখি… গেঁথে রাখি মনপোড়া কথা—
তাই তো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে তোমার খয়েরি
                                     ডায়েরির পাতা

ঘুম

এই বুঝি স্তব্ধতা নিয়ে জেগেছে পৃথিবী জেগেছো তুমি, জেগেছে ঘুমের শরীর
স্থির চোখের আড়াল যেন নিভে গেছে কেউ
নিবিড় কারা? জানা নেই তবে—
নিভে যেতে দেখেছি কতশত শব্দহীন আকাশ

নিদ্রাপীঠে ঘুমের পৃথিবী তবে আমার, একার
কেননা আমি হাঁটতে হাঁটতে ঘুমোতে জানি
যেমন করে জেগে থাকো তুমি, ঘুমের মাঝে
হয়ে যাও একা, একাকার